Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ইগ নোবেল: যা কিছু হাসায়, আবার ভাবনার খোরাকও জোগায়

“The Ig Nobel Prizes honor achievements that make people LAUGH, then THINK.”

ইগ নোবেল (Ig Nobel) প্রাইজের নাম শুনেছেন কখনো? বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ব্যক্তিদের নোবেল পুরস্কার জেতার কথা তো হরহামেশাই শোনা যায়। কিন্তু ইগ নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের খোঁজ কি রাখেন আপনি? নাকি আদৌ এ পুরস্কার কোনো গুরুত্বই বহন করে না? 

ইগ নোবেল একধরনের ব্যঙ্গাত্মক (Satirical) পুরস্কার। ‘Ignoble’ শব্দ থেকেই মূলত এই ‘Ig Nobel’ এর নামকরণ করা হয়েছে। কোনো কিছু মহৎ,উন্নত কিংবা পুরস্কারের যোগ্য নয় এমন কিছুই ‘Ignoble’। তাই বলে ইগ নোবেল পুরস্কার কিন্তু মোটেই ফেলনা কিছু নয়। 

বিজ্ঞানের যেসকল উদ্ভাবন প্রথমে হাস্যরসের উদ্ভব ঘটায়, এরপরে তাতে ভাবনার খোরাকও জোগায় এমন কিছু উদ্ভাবনকে সম্মান জানাতেই এই আয়োজন। পরিপূর্ণ নোবেল পুরস্কারের আদলে এ যেন এক রসাত্মক নোবেল। 

১৯৯১ সাল থেকে বিজ্ঞানভিত্তিক রসাত্মক ম্যাগাজিন ‘Annals of Improbable Research’ এর আয়োজনে পুরস্কারটি প্রদান করা হয়। প্রতি বছর সত্যিকারের নোবেল পুরস্কার ঘোষণার ঠিক আগের মাসেই আয়োজন করা হয় ইগ নোবেল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটা করে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সত্যিকারের নোবেল বিজয়ীরা। ইগ নোবেল বিজয়ী মজার কিছু উদ্ভাবন ও এ সম্পর্কিত দারুণ কিছু ঘটনা নিয়েই আজকের এ আলোচনা।

ইগ নোবেল থেকে সত্যিকারের নোবেল 

২০০০ সালে পদার্থবিজ্ঞানে ইগ নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন রাশিয়ান পদার্থবিজ্ঞানী আন্দ্রে গেইম। একটি ব্যাঙের চারিদিকে শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে ব্যাঙটিকে কিছুক্ষণ শূন্যে ভাসমান রাখতে সক্ষম হন তিনি। তার এই পরীক্ষণ আসলে ডায়াম্যাগনেটিজমের জলজ্যান্ত উদাহরণ। ৯০ ভাগ পানি দিয়ে তৈরি ব্যাঙের মধ্যকার চৌম্বক ক্ষেত্র আর বাহ্যিক চৌম্বক ক্ষেত্রের পারস্পরিক ক্রিয়ায় অভিকর্ষ বলের লোপ পাওয়া ব্যাঙের ভেসে থাকার কারণ।

ডায়াম্যাগনেটিজমের সাহায্যে বায়ুতে ভাসছে জীবন্ত ব্যাঙ;Image source: ru.nl

রসাত্মক এই নোবেলে যেন সন্তুষ্ট থাকতে চাইলেন না গেইম। ২০০৪ সালে বিজ্ঞানী কন্সট্যান্টিন নভসেলভের সাথে যৌথভাবে আবিষ্কার করে ফেলেন গ্রাফিন। কার্বনের বিস্ময়কর রূপ গ্রাফিন সম্পর্কে নতুন করে কিছুই বলার নেই! মনে করা হয়, অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীকে আমূল বদলে দিতে যাচ্ছে এই গ্রাফিন।

২০১০ সাল। মহামূল্যবান গ্রাফিন আবিষ্কারের জন্য এবার সত্যিকারের নোবেলই দেওয়া হলো আন্দ্রে গেইমকে। ততক্ষণে বিশ্বে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ইগ নোবেল ও নোবেল দুটি পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে আন্দ্রে গেইমের নামও লেখা হয়ে গেছে ইতিহাসের পাতায়। 

হার্ভার্ডে ইগ নোবেল পুরস্কার ঘোষণা অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হয় এই বলে, “If you didn’t win a prize — and especially if you did — better luck next year!”

কে জানে আন্দ্রে গেইম মনে মনে কী অনুবাদ যে করেছিলেন কথাটির…

আঙুল ফোটালে কি আর্থ্রাইটিস হয়?

আঙুল ফোটানো অনেকের জন্য এক নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। কিন্তু এই আঙুল ফোটানোর জন্য কি কোনো সমস্যা হতে পারে কিনা এমন চিন্তা ক’জনই বা করি আমরা? ড. ডোনাল্ড এল. আঙ্গারের ক্ষেত্রে ঠিক এর বিপরীতটাই ঘটেছিল। হাতের হাড়ের সন্ধিস্থলে শব্দ তৈরি বা আঙুল ফোটানোর ফলে কি আর্থ্রাইটিস হতে পারে? পঞ্চাশ বছর ধরে ঠিক এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন তিনি। নিয়ম করে প্রতিদিন অন্তত দুবার বাম হাতের আঙুলগুলো ফুটিয়েছেন ড. আঙ্গার। 

একটি স্বাভাবিক হাতের এক্স রে ইমেজ ;Image source: radiopaedia.org

এভাবে বছরের পর বছর ধরে কমপক্ষে ৩৬,৫০০ বার ফুটিয়েছেন তার বাম হাতের আঙুলগুলো। অন্যদিকে ডান হাতের আঙুলগুলো ইচ্ছা করে কখনোই ফোটানোর চেষ্টা করেননি। যদিও কখনো বা মনের অজান্তেই ডান হাতের আঙুলগুলো ফুটিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু এমনটা খুব কমই ঘটেছে। এরপর কী হলো? ড. আঙ্গার দেখলেন তার কোনো হাতেই বাত ব্যথা বা আর্থ্রাইটিস হয়নি। এছাড়া দুই হাতেই অন্যান্য কোনো জটিলতাও নেই। ড. ডোনাল্ড আঙ্গারের এমন হার না মানা  অনুসন্ধান তাকে ২০০৯ সালে চিকিৎসায় ইগ নোবেল পুরস্কার এনে দেয়।

কলার খোসায় পা পিছলে নোবেল জয়!

রাস্তাঘাটে কলার খোসায় পা পিছলে আলুর দম হওয়ার অভিজ্ঞতা তো অনেকেরই আছে! কিন্তু এর পেছনের বিজ্ঞান নিয়ে ভেবেছেন কয়জন? জাপানের কিতাসাতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কিয়োশি মাবুচি ও তার দল এ বিষয়ে গবেষণা করে ২০১৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানে ইগ নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। একসময় কিয়োশি মাবুচি তার গবেষণার অংশ হিসেবে অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করেও কলার খোসায় পা পিছলে যাওয়ার বিজ্ঞান নিয়ে কোনো গবেষণাপত্র খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হন। পরে নিজেই এ বিষয়ে প্রথম গবেষণাটি করার সিদ্ধান্ত নেন। কলার খোসাকে পদার্থবিজ্ঞানের আতশকাচের নিচে ফেলে একে একে উন্মোচন করেন কলার খোসার ঘর্ষণের পরিমাপ, ঘর্ষণ গুণাঙ্ক ও কলার খোসার মিউকাসের নানা রহস্য।

মাল্টিএক্সিয়াল লোড ট্রান্সডিউসার ব্যবহার করে ঘর্ষণ পরিমাপের একটি দৃশ্য। সেন্সরগুলোতে রাখা একটি কলার খোসা পায়ে মাড়ানো হচ্ছে; Image Source: Science Direct/roar bangla

পৃথিবী ধ্বংসের ভুলভাল দিনক্ষণ গণনা

২০১১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, উগান্ডা ও কোরিয়ার মোট ছয়জনের ভাগ্যে জোটে গণিতের ইগ নোবেল পুরস্কার। তাদের অবদান- তারা কোনো কিছুর গাণিতিক হিসাবনিকাশে সকলকে আরও সতর্ক হতে শিখিয়েছেন! এই ছয়জন প্রত্যেকে পৃথক পৃথকভাবে নানা গাণিতিক হিসাবনিকাশের সাহায্যে পৃথিবী ধ্বংসের একটি আনুমানিক দিনক্ষণ ঘোষণা করেন। কিন্তু তাদের কারো অনুমান সঠিক বলে প্রমাণিত হয়নি। পৃথিবী এখনও বহাল তবিয়তেই বিদ্যমান! কিন্তু কোনো কিছুর প্রামাণিক ব্যাখ্যা গাণিতিকভাবে দেওয়ার চেষ্টাকে যে আরও সতর্কভাবে করা উচিত- এরকম পরোক্ষ বার্তা দিতেও তো সক্ষম হয়েছেন তারা! 

ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির ইগ নোবেল জয়

২০০০ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পায় ব্রিটিশ রয়েল নেভি। রয়েল নেভির বিভিন্ন প্রশিক্ষণে বন্দুকের গুলি ছুড়ে কামানের গোলা নিক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এ প্রক্রিয়াকে যেন বদলে দিতে চাইল রয়েল নেভি। গুলি ছোড়ার পরিবর্তে তারা মাইক্রোফোনে ‘Bang’ বলতে শুরু করল। আর এই ‘Bang’ শব্দটিই কামানের গোলা নিক্ষেপের নির্দেশক হয়ে উঠল! এতে রয়্যাল নেভির প্রশিক্ষণে বন্দুকের গুলির সরবরাহ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমতে শুরু করল। রয়্যাল নেভির জন্য নির্ধারিত বাজেটেও এর প্রভাব পড়ল স্পষ্টতই। যদিও এভাবে ‘Bang’ বলে প্রশিক্ষণ কতটা ফলপ্রসূ- এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল ব্রিটিশ পার্লামেন্টে। 

ব্রিটিশ রয়েল নেভি;Image source: Wikimedia Commons

ইগ নোবেলের ঝাড়ুদার থেকে সত্যিকারের নোবেল বিজয়ী!

ইগ নোবেল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে কাগজের তৈরি প্লেন ছুড়ে মারা। এতে অনেক সময়ই মঞ্চের দিকে কাগজের প্লেনগুলো দিয়ে নোংরা হয়ে থাকতে দেখা যায়। তাই প্রয়োজন হয় ঝাড়ু দেওয়ার। আর বিজ্ঞানমনস্ক ভাবনার এমন অনুষ্ঠানে ঝাড়ু দেওয়াকেও যেন সম্মানের কাজ বানিয়েছিলেন রয় গ্লোবার। প্রায় ২০ বছর ধরে এ কাজ করে গেছেন তিনি। একসময় হার্ভার্ডের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক বনে গেলেও এতটুকু তুচ্ছ মনে করেননি তার এই কাজকে। বিজ্ঞানের প্রতি রয় গ্লোবারের এই ভালোবাসাই হয়তো তাকে নতুন কিছু করার তাড়না দিত বারংবার। তাই তো তিনি আলোর প্রকৃতি অনুসন্ধানে ব্যয় করেছেন অনেকটা সময়। আলো সম্পর্কে আমাদের জানাকে করেছেন আরও সমৃদ্ধ। অপটিক্যাল কোহেরেন্সের কোয়ান্টাম তত্ত্ব অনুসন্ধানে রেখেছেন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। ২০০৫ সালে যৌথভাবে পেয়েছেন পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল। বিজ্ঞানের প্রতি তার এই ভালোবাসার উপযুক্ত প্রতিদান যেন পেলেন তিনি।

ইগ নোবেল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে কাগজের প্লেন ঝাড়ু দিচ্ছেন রয় গ্লোবার; Image source:improbable.com

যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যদের কোষ্ঠকাঠিন্যের উপর গবেষণা

যুদ্ধক্ষেত্রে আর বাসাবাড়ির মতো আরাম করে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার ফুরসত কই? দিনের পর দিন বনেবাদাড়ে কাটিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য তো বাধতেই পারে! কিন্তু এমন একটি বিষয়কেও গবেষণার নিরিখে দেখতে চেয়েছেন কেউ কেউ। ১৯৯৪ সালে যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যদের কোষ্ঠকাঠিন্যের উপর গবেষণা করে জীববিজ্ঞানে ইগ নোবেল পুরস্কার জিতেছেন বিজ্ঞানী ব্রায়ান সুইনি, ব্রায়ান জ্যাকোবস, জেফরি ব্রিটন ও ওয়াইনে হ্যানসেন। তাদের গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় এই শিরোনামে- ”The constipated serviceman: prevalence among deployed U.S. troops”

তাদের গবেষণা বলছে- তিন দিনের বেশি সময় ধরে পায়খানা না হওয়াকে যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের মানদণ্ড হিসেবে ধরে নেওয়া হয়, তাহলে যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যদের কোষ্ঠকাঠিন্যের হার ৩০.২৯%। অথচ একই মানদণ্ডে বাড়িতে অবস্থানরত সৈন্যদের মধ্যে এ হার মাত্র ৩.৯%। 

অন্যদিকে, শক্ত পায়খানা হওয়া, পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া- এগুলোকে যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের মানদণ্ড হিসেবে নেওয়া হয়, তাহলে বাড়িতে অবস্থানরত সৈন্যদের কোষ্ঠকাঠিন্যের হার যেখানে ৭.২%, যুদ্ধক্ষেত্রেই সেটা গিয়ে দাঁড়ায় ৩৪.১% এ। সোজাকথায়, কোষ্ঠকাঠিন্যকে যেভাবেই সংজ্ঞায়িত করা হোক না কেন, যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যদের কোষ্ঠকাঠিন্যের হার অনেক বেশি! আর সমস্যা যখন আছে, তখন কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টিও সামনে আনতে সক্ষম হন এই বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা থেকে যারা বিজ্ঞানসম্মতভাবে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তাদের উদ্যোগকে সম্মান জানাতেই ইগ নোবেল পুরস্কার প্রদানের এই আয়োজন। এতে করে নতুন কিছু জানার আগ্রহ থেকেই দিন বদলের নব উদ্যমের সূচনাও হচ্ছে যথার্থভাবেই। ইগ নোবেল হয়ে উঠছে প্রতি বছরের বিজ্ঞানের দিনলিপি। বিখ্যাত ‘নেচার’ সাময়িকীর ভাষায়, “The Ig Nobel awards are arguably the highlight of the scientific calendar.”

This article is written in Bangla. It is about some interesting facts of Ig Nobel prize. It also describes interesting research that win Ig Nobel prize. Necessary references are hyperlinked inside the article.

Featured Image: The DNA Universe

Related Articles